ঢাকা,শনিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৪

চকরিয়া-পেকুয়া আসন: বেকায়দায় জাফর, চমক দেখাতে পারেন কল্যাণ পার্টির ইব্রাহিম

নিজম্ব প্রতিবেদক, চকরিয়া :: জেলার চারটি সংসদীয় আসনের মধ্যে আলোচিত আসনটি হল কক্সবাজার-১ (চকরিয়া-পেকুয়া)। এর মধ্যে তিনটিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী থাকলেও চকরিয়া-পেকুয়া আসনে আওয়ামী লীগের কোন প্রার্থী নেই। আওয়ামী লীগের সালাহউদ্দিন আহমদ সিআইপি দলের মনোনয়ন পেলেও আইনী জটিলতায় আটকে যায় তার প্রার্থীতা। ফলে ভোটের মাঠে আর নামতে পারছেন না তিনি।

তবে এ আসনে ৭জন প্রার্থী থাকলেও শেষ পর্যন্ত লড়াই হবে দুই হেভিয়েওয়েট প্রার্থীর মধ্যে। এর একজন হলেন কল্যাণ পার্টির সৈয়দ মোহাম্মদ ইব্রাহিম ও অপরজন স্বতন্ত্র প্রার্থী বর্তমান সাংসদ জাফর আলম। এবার এ আসনে চমক দেখাতে পারেন কল্যাণ পার্টির প্রার্থী সৈয়দ মোহাম্মদ ইব্রাহিম।

জানা যায়, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফশিল ঘোষণার পর থেকেই নানামূখী আলোচনা চলছে এ আসনের নির্বাচন ঘিরে। নানা আলোচনা-সমালোচনা আর নাটকীয়তার পর শেষ পর্যন্ত এ আসনে জমে উঠেছে প্রচার-প্রচারণা। প্রচারণায় ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রার্থীরা।

আসনটিতে নৌকা প্রতীক পেয়ে চমক দেখিয়েছিলেন কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সালাহউদ্দিন আহমদ সিআইপি। এরআগেও আরও তিনবার দলের মনোনয়ন পেয়েছিলেন তিনি। তবে এবার আইনী জটিলতায় ছিটকে পড়ে তার মনোনয়নটি। ভোটের মাঠে ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থী না থাকলেও স্বস্তিতে নেই এ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী বর্তমান সাংসদ জাফর আলম।

জাফর আলম খালি মাঠে গোল দেওয়ার সুযোগ থাকলেও কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত) সৈয়দ মোহাম্মদ ইব্রাহিম মাঠে থাকায় সেটা আর সম্ভব হচ্ছে না। কারণ ভোটের মাঠে তার জন্য শক্ত প্রতিদ্ব›দ্বী হয়ে দাঁড়িয়েছে ইব্রাহিম।

নৌকার প্রার্থী সালাহ উদ্দিন আহমদ সিআইপি মাঠে না থাকায় তার সমর্থকরাও কল্যাণ পার্টিকে সমর্থন দিয়েছেন। গত ২৩ ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে জেলা আওয়ামী লীগ সমর্থন দেন সৈয়দ মোহাম্মদ ইবরাহিমকে। এরফলে হেভিওয়েট এই প্রার্থীই পাল্টে দিতে পারেন ভোটের হিসেব নিকেশ।

স্বতন্ত্র প্রার্থী জাফর আলম শক্তিশালী প্রার্থী হলেও অনেকটা বেকাদায় পড়েছেন তিনি এখন। তার কাছ থেকে দিনদিন সরে যাচ্ছেন দলের নেতাকর্মীরা। জাফরের পক্ষে কয়েকজন পদবীধারী থাকলেও আওয়ামী লীগের বিশাল অংশ ইব্রাহিমের হাতঘড়ির পক্ষে কাজ করছেন। ফলে ভোটের সমীকরণে পিছিয়ে পড়ছেন জাফর আলম।

এছাড়াও গত পাঁচবছর সাংসদ জাফর আলম নানা বির্তকিত কর্মকান্ডে আলোচিত-সমালোচিত হয়েছেন। গড়ে তুলেন নিজস্ব বাহিনী। অভিযোগ আছে তাঁর ভাতিজা জিয়াবুল হক ও ভাগিনা মিজানুর রহমানের নেতৃত্বে শতাধিক ক্যাডার নিয়ে অপরাধ জগতের তিনিই মূলত নেতৃত্ব দিচ্ছেন।

চকরিয়া-পেকুয়া উপজেলায় জমি ও চিংড়ি ঘের দখল, চাঁদাবাজি এ বাহিনীর নিয়মিত ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাদের নির্যাতনের হাত থেকে রেহায় পাননি আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা। অমানষিক নির্যাতন, হামলা ও মামলা দিয়ে হয়রানী করেছেন। এই বাহিনীর অস্ত্রধারীরা এখনো হুমকি ধমকি দিচ্ছেন নেতাকর্মীদের।

অভিযোগ রয়েছে, বর্তমান সাংসদে এসব অপরাধের আশ্রয় প্রশ্রয় দিয়ে একাধিকবার গণমাধ্যমের শিরোনামও হয়েছেন। গণমাধ্যমের শিরোনাম হলেও ক্ষমতার দাম্বিকতায় এসবের পাত্তা দেননি তারা।

এদিকে দলীয় কোন্দল, সাংগঠনিক নির্লিপ্ততাসহ বহু সমস্যায় জর্জরিত জাতীয় পার্টির বর্তমান অবস্থা অনেকটাই নড়বড়ে। এর সাথে যুক্ত হয়েছে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় রেষারেষি। এরপরও গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন জাতীয় পার্টির লাঙ্গলের হোসনে আরা। ভোটে রয়েছেন ওর্য়াকার্স পার্টির হাজী বশিরুল আলম। তিনিও হাতুড়ি প্রতীক নিয়ে পথসভা চালিয়ে যাচ্ছেন।

ভোটাররা বলছেন, তবে ইব্রাহিম ও জাফরকে ঘিরেই এ আসনে বইছে নির্বাচনী আমেজ। হাট বাজার ও চায়ের স্টলে ভোটাররা করছেন চুলচেরা বিশ্লেষণ। দিন যত যাচ্ছে প্রার্থীরা নিজেদের ভোটের সংখ্যা ভারী করে তুলছেন।

ইতিমধ্যে চকরিয়া ও পেকুয়া দুটি উপজেলাতেই প্রধান সড়ক, হাট বাজার এবং চায়ের দোকান ছেয়ে গেছে পোস্টার ও ব্যানারে। পাশাপাশি প্রতিদিন প্রার্থীরা ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন। নিজের জয় নিশ্চিত করতে ভোটারদের দিচ্ছেন নানা প্রতিশ্রুতি। নির্বাচনকে ঘিরে প্রার্থীদের মধ্যে চলছে তীব্র প্রতিযোগিতা।

জাফর আলমের সমর্থকরা জানান, তাদের প্রার্থী কক্সবাজার-১ আসনের এমপি হয়ে এলাকার অনেক উন্নয়ন মূলক কাজ করেছেন। আওয়ামী লীগের সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা অনুযায়ী প্রতিদ্বীতাপূর্ণ ও অংশ গ্রহণ মূলক নির্বাচনের জন্য তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। নৌকার প্রার্থী না থাকায় দলমত নির্বিশেষে তাকে ভোট দিয়ে বিজয় করবেন। জনগণের ভোটে আবারও নির্বাচিত হবেন তিনি।

অপরদিকে হাতঘড়ির সমর্থকরা জানান, বর্তমান সরকারের উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে কল্যাণ পার্টি নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি গুলো সরকার সংসদে আনতে চাচ্ছেন। সেই হিসেবে কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান একজন রণাঙ্গণের বীর মুক্তিযোদ্ধা। এছাড়া নৌকার প্রার্থী না থাকায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা তার পক্ষে একাট্টা হয়ে কাজ করছেন। তাই বিপুল ভোটে তাদের প্রার্থী বিজয়ী হবে বলে তারা আশাবাদী।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কক্সবাজার-১ (চকরিয়া-পেকুয়া) আসনে ৭জন প্রার্থীর মধ্যে ইসলামী ফ্রান্টের বেলাল উদ্দিন (মোমবাতি), মিরাক্কেল তারকা কমরুউদ্দিন আরমান ও সাংসদ জাফর আলমের পুত্র স্বতন্ত্র প্রার্থী তানবির সিদ্দিকী তুহিনও রয়েছে নির্বাচনী মাঠে।

পাঠকের মতামত: